-ভাই আপনে যাইবেন না? (রাহাত)

-মাত্র ভার্সিটি থেকে আসলাম। তোরা যা। আমি আসতেছি৷ আমার ব্যাট টা নিয়া যা। (অঙ্কন)
-আচ্ছা ভাই আপনে খাওয়া দাওয়া কইরা আসেন। বুয়া আসছিলো?
-হুম রান্না করা আছে দেখলাম।
-আচ্ছা আপনে আসেন। পোলাপান আপনার জন্য ওয়েট করতাছে৷ আপনে না গেলে খেলা জমে না।
-দশ মিনিটে আসতেছি। যা তুই।
অঙ্কন মাস্টার্স এর ফার্স্ট সেমিস্টার দিয়েছে। ওই এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আইডল যদি কেউ থাকে তাহলে তা অঙ্কন। বয়স্করা ও অঙ্কনকে অনেক ভালবাসে। অঙ্কন দেখতে স্মার্ট, অমায়িক, পরোপকারী, আল্লাহ ভক্ত, আর বিশেষ করে ক্রিকেট ওর প্রাণ। ক্রিকেট ছাড়া অঙ্কন আর চিনি ছাড়া মিষ্টি একই কথা। শুধু সমস্যা হলো অঙ্কন এতিম। মা বাবা, ভাই বোন কেউ নেই অঙ্কনের। বনানীর একটা এপার্টমেন্ট এর পাঁচ তলায় সিঙ্গেল রুম নিয়ে থাকে অঙ্কন। যত ঝামেলায় অঙ্কন পড়ুক না কেন এলাকার ছেলেরা এসে ওর বিপদে ঝাপিয়ে পড়ে। বাড়িওয়ালা অঙ্কনের থেকে হাফ ভাড়া রাখে। উনি অঙ্কনের থেকে টাকা একেবারেই নিতে চান নি কিন্তু অঙ্কন কারো দয়ায় থাকবেনা তাই জোর করে অন্তত হাফ ভাড়াটা দেয়। জগন্নাথ ভার্সিটির কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এর স্টুডেন্ট অঙ্কন। দুঃসম্পর্কের এক চাচা ই ওকে দেখেছে ছোট বেলা থেকে। উনি মারা যাওয়ার পর অঙ্কন ফ্রেন্ডদের সাথে কিছু ছোট খাটো বিজনেস করেই নিজেকে চালিয়ে নেয়। আর এলাকার ছোট ভাইয়েরা তো আছেই।
যাইহোক ভার্সিটির ড্রেস পালটে টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে মাঠে যায় অঙ্কন। অঙ্কনকে দেখে সবাই খুশি।
-ভাই খাইয়া আসছেন? (রাজু)
-হুম। আচ্ছা আমি বুঝিনা তোরা আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করস কেন? আমি কি চলতে পারিনা নাকি? (অঙ্কন)
-কি বলেন ভাই আপনি ক্রিকেট কে যতটা ভালবাসেন তার থেকে হাজারগুন বেশি আমরা আপনাকে ভালবাসি। আপনাকে নিয়ে চিন্তা না করলে কাকে নিয়ে করব? (জিহান)
-হইছে থাম! খেলা শুরু কর। মাগরিবের টাইম হয়ে যাবে পরে।
-হ ভাই চলেন। সবাই মিলেই আজকে যাব নামাজ পড়তে। (রাহাত)
-এ আর নতুন কি? (অঙ্কন)
টিম ভাগ করার পর অঙ্কন ব্যাটিং করছিলো। মাঠ থেকে মেইন রাস্তা অনেকটা দূরে। অঙ্কনের ব্যাট করার মাঝে অঙ্কন এত উঁচুতে বল মেরেছে তা উড়ে গিয়ে একটা মেয়ের পায়ের উপর পরলো। মেয়েটা সাথে সাথে পায়ে হাত দিয়ে বসে পরলো। মেয়েটার সাথে ছিল ওর ছোট বোন রাইসা। অঙ্কন ব্যাট রেখে দৌঁড়ে রোডে আসে। অঙ্কনের পিছু পিছু বাকি ছেলেরাও আসে।
-ব্যাথা পেয়েছেন? আই এম স্যরি। আসলে আমি বুঝিনি বলটা এত দূর চলে আসবে। স্যরি। (অঙ্কন)
-এই যে ভাইয়া স্যরি বললেই কি ব্যাথাটা চলে যাবে। আমার আপুর পা টা কালো হয়ে গেছে দেখছেন? (রাইসা) রাস্তার মাঝে এসে খেলছেন। দেখছেন তো সবাই হাঁটাহাঁটি করছে।
-আচ্ছা আপু ভাই স্যরি বলছে তো। তাহলে এত কথা কেন বলছো? (জিহান)
-আমি আপু না মাত্র ক্লাস টেইনে পড়ি। (রাইসা)
-এক্সকিউজমি! (কুহুকে ডেকে অঙ্কন)
-হোয়াট? (মাথা উঁচু করে কুহু কাঁদছে)
-একি কাঁদছেন কেন? স্যরি আমি ইচ্ছে করে মারিনি। প্লিজ কাঁদবেন না। (অঙ্কনের কিছু বলার ভাষা হারিয়ে গেছে)
-ইটস ওকে বাট অনেক ব্যথা পেয়েছি ভাইয়া। (কুহু)
-আচ্ছা উঠুন। বাসায় যেতে পারবেন নাকি রিক্সা ডেকে দিব? (অঙ্কন)
-ভাই আপনে দাঁড়ান আমি একটা রিক্সা নিয়ে আসি। (রাজু)
-না যেতে পারবো। (কুহু)
রাজু ততক্ষণে একটা রিক্সা নিয়ে এসেছে। শিহাব ও সেখানে ছিল। কুহুর পাশের ফ্ল্যাটের ছেলে শিহাব। রাইসা কুহুকে ধরে রিক্সায় উঠালো। এরপর ওরা চলে গেলো আর অঙ্কন তাঁকিয়েই রইলো। কুহু চলে যাওয়ার পর শিহাব বলল,
-ভাই আপনে ভাইবেন না কিছু। ওর নাম কুহু। আমার পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
-দেখতেই দেখা যায় পিচ্চি বাট এতটা পিচ্চি হবে ভাবিনি। যাইহোক অনেক ব্যাথা পেয়েছে পা দেখলেই বোঝা যায়। (অঙ্কন)
-থাক ভাই আপনে কিছু ভাইবেন না। চলেন খেলি।
-হুম চল।
অঙ্কন যাদের সাথে মিশে তারা সব অনার্স আর ইন্টারের ছাত্র। ওদের সাথে মিশতেই অঙ্কনের যত মজা। আর ওরা সব অঙ্কনের মতো করে নিজেদের সাজায়। যারা সিগারেট খেতো বা আজেবাজে কাজ করতো তারা অঙ্কনের সাথে চলার পর সব ছেড়ে দিয়েছে। বিকেল হলেই খেলতে আসবে সব। মাগরিবের পাঁচ মিনিট আগে সব মাঠ ছেড়ে বাসায় গিয়ে পাঞ্জাবি পরে এলো। সবাই একসাথে নামাজ পড়তে গেলো। প্রতিদিনের মতই সন্ধ্যার পর অঙ্কন বাসায় থাকে আর গল্পের বই পড়ে। কিন্তু অঙ্কন ভাবছে
-আমি তো সব মেয়েকেই আপু বলি কিন্তু আজ কুহুকে কেন আপু বললাম না? আপু কেন আসলো না মুখ দিয়ে? যদিও ও আমার ছোট তবুও তো আমার আপু বলা উচিৎ ছিল। পা এর কি অবস্থা কে জানে! যেইভাবে কালো হয়েছিলো!
অঙ্কন আবার পড়া শুরু করলো। ওইদিকে কুহুর পায়ে কুহুর আম্মু বরফ ধরেই রেখেছে। পা ফুলে গেছে অনেকখানি। রাইসা পাশে বসে বই পড়ছে।
-কে মেরেছে এইভাবে বল? নাম টা অন্তত বল। (আম্মু)
-আম্মু আমি জানিনা। আমি এলাকার একটা ছেলেকেও তো চিনি না। ওই ভাইয়াটা কেও এই প্রথম ই দেখলাম। (কুহু)
-আপু ভাইয়া বলবিনা। কি হ্যান্ডসাম ছিল দেখেছিস! আমি ক্রাশ খেয়েছি তাই বেশি কিছু বলিনি। নইলে গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়তাম। (রাইসা)
-থাপ্পর মেরে তোর দাঁত ফেলে দিব বেয়াদব! তোর কত বড় জানিস? (কুহু)
-প্রেম মানেনা বাঁধা আপু।
-রাইসা থামবি তুই? (আম্মু ধমক দিয়ে)
চলবে.................