কুহু রাইসাকে থামালো। মনে মনে কুহু অঙ্কনের গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ছে। আবার ভাবছে উনি তো ইচ্ছে করে বলটা পায়ে মারেন নি। অঙ্কন ও একই কথা ভাবছে। সারারাত ভাবনাতেই কাটিয়ে দিল অঙ্কন। অঙ্কন নিজেই নিজের উপর বিরক্ত কারণ বারবার ও কুহুর কথাই ভাবছে যা এর আগে কোনোদিন হয়নি। মেয়েদের দিকে তাঁকাতে পারতো না যে ছেলে আজ সে একটা মেয়ের কথা এইভাবে ভাবছে?
অঙ্কনের আজ ল্যাব ক্লাস আছে ভার্সিটিতে। শার্ট আর প্যান্ট পরেই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ভার্সিটির দিকে পা বাড়ালো অঙ্কন। বাড়ির নিচে নেমে একটা রিক্সা নিয়ে বাস স্ট্যান্ড এ যাবে ও। রিক্সাতে যাওয়ার সময় অঙ্কন ওর ফ্রেন্ডদের সাথে ইম্পর্টেন্ট একটা টপিকস নিয়ে ডিসকাস করছিলো। কথা শেষ করতেই দেখলো শিহাবের নাম্বার থেকে ফোন। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে শিহাব।
-হ্যা শিহাব বল।
-ভাইয়া আম্মু কথা বলবে আপনার সাথে। একটু বলেন। (শিহাব)
-আচ্ছা দে। আন্টি আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম সালাম বাবা! কেমন আছো?
-জ্বি আন্টি আমি ভাল আছি। আপনারা?
-আমরা তো ভালই আছি। তুমি বিয়েতে আসছো তো বাবা?
-আন্টি শিহাব আমাকে অনেকবার বলেছে কিন্তু আমি কিভাবে যাবো আন্টি? আজকে আমার ল্যাব ক্লাস। ফিরতে লেট হবে।
-যত দেরিই হোক তুমি আসবে। এইটা অনুরোধ রইলো। তুমি আসলে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু করব। তাছাড়া শিহাব ও চায় না ওর বোনের বিয়েতে তুমি না আসো। প্লিজ বাবা এসো রাতে।
-আন্টি আমি আসব কথা দিলাম। আমার জন্য ওয়েট করতে হবেনা। জাস্ট টাইমে আসার ট্রাই করব।
-খুশি হলাম অঙ্কন। সন্ধ্যায় দেখা হচ্ছে।
-অঙ্কন ভাইয়া আসবে? (খুশিতে চিল্লিয়ে শিহাব)
-হ্যা আসবে অঙ্কন।
-ইয়াহুউউ! তাহলে এখন সবাইকে কল দিয়ে আসতে বলি কি বলো? অঙ্কন ভাইয়ার জন্য আমি আগেই পাঞ্জাবি বানাতে দিয়েছিলাম ম্যাচিং করে। আল্লাহ বাঁচাইছে দিছিলাম।
-পাগল! (শিহাবের আম্মু)
শিহাব এক এক করে সবাইকে কল দিয়ে বলল অঙ্কন ভাইয়া আসছে তোমরাও আসো। সবাই অনেক খুশি। কারণ ওরা আগেই প্ল্যান করে রেখেছে অঙ্কন না গেলে ওরা কেউ যাবেনা।
অঙ্কন সন্ধ্যাবেলা ভার্সিটি থেকে ফিরে মাগরিবের নামাজ পড়ে লাঞ্চ করে। যদিও তখন লাঞ্চ টাইম না কিন্তু অঙ্কনের লাঞ্চ টাইম ওইটাই। অঙ্কন খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে যাবে তখন দরজায় বেল বাজলো। অঙ্কন দরজা খুলে দেখে সব ছেলেরা ওর বাসায়। আর শিহাবের হাতে একটা ব্যাগ।
-কিরে তোরা? (খুশি হয়ে অঙ্কন) কিরে শিহাব আজকে না তোর বোনের বিয়ে? তুই কি করিস?
-আপনাকে নিতে আসলাম ভাইয়া। এই যে পাঞ্জাবি আপনার। সবাই এক পাঞ্জাবি পরব। ভাই প্লিজ না করবেন না। আপনি রেডি হয়ে আসেন। আমরা নিচে দাঁড়াই।
-তোরা কি পাগল? বিয়ে বাড়িতে না গিয়ে আমার বাসায় এসেছিস? আমি তো চলেই যেতে পারতাম।
-নামাজ পরে আসলাম সবাই। তাই ভাবলাম আপনাকে নিয়েই যাই। ভাই রেডি হয়ে আসেন আপনি। (রাহাত)
-আচ্ছা আসতেছি।
অঙ্কন পাঞ্জাবিটা পরে সুন্দর করে বডি স্প্রে করে আর চুলগুলো ঠিক করে রেডি হলো। পাঞ্জাবির সাথে চুরিদার ছিল ওইটা পরলো আর সাথে একটা কোটি। অঙ্কন অনেক লম্বা তাই পাঞ্জাবি বা যেকোনো ড্রেসে ওকে দারুণ মানায়। পাঞ্জাবির সাথে নরমাল জুতাই ভাল লাগে তাই অঙ্কন একজোড়া চামড়ার জুতা পরলো। ঘর লক করে নিচে নেমে গেলো ও। এরপর সবাই অঙ্কন কে দেখে বলে,
-ভাই মাশাল্লাহ! অনেক সুন্দর লাগতাছে আপনাকে। কোনো মেয়ে যাতে আপনাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে না নেয়। (জিহান)
-ওই জিহান থামবি তুই! এই বয়সেই এইসব পাক্নামি? (অঙ্কন)
-ভাই জিহান ঠিকই বলছে। সাবধানে থাকবেন আজকে। (রাহাত)
-তোরা থাক আমি গেলাম!
অঙ্কন আগে আগে হেঁটে যাচ্ছিলো পরে ওরাসহ সবাই একসাথে গেলো। শিহাবদের বাসার ছাদে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে আর নিচে খাওয়া দাওয়া। অঙ্কন গিয়ে আগে শিহাবের আম্মুর সাথে দেখা করলো। শিহাবের আম্মু অঙ্কনকে দেখে ভীষণ খুশি হয়। শিহাব অঙ্কনকে নিয়ে সাত তলার ছাদে গেলো। শিহাব রা থাকে দোতালায় আর পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে কুহুর পরিবার।
অঙ্কন গান, নাচানাচি এসব পছন্দ করেনা তাই ছেলেরা এসব কিছুই করছেনা। শুধু বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর মজা করছে। কথা বলতে বলতেই অঙ্কনের চোখ গেলো ছাদের দরজার দিকে। শিহাবের বোনকে নিয়ে উপরে উঠছে চারটা মেয়ে। তার মধ্যে প্রথম মেয়েটা অঙ্কনের চেনা, খুব ভালভাবেই চিনে অঙ্কন। অঙ্কন দাঁড়িয়ে গেলো। শিহাবের বোনের মাথার উপরের ওড়না টা ধরে রেখেছিলো এক হাত উঁচু করে মেয়েটি। মেয়েটি আর কেউ নয় কুহু। এ কি দেখছে অঙ্কন! কুচিছাড়া লাল রঙের তাঁতের শাড়ি আর গা ভর্তি গহনা! চুলগুলো খোঁপা করে ফুল লাগানো আর নজর কাড়া চোখ! অঙ্কন চাইলেও চোখ সরাতে পারছেই না। এতগুলো মেকাপ করা মুখের থেকে কুহুর মুখটাই যেন স্বাভাবিক লাগছে অঙ্কনের কাছে। অঙ্কন মুখে হাত দিল। আর নিজের মাথায় নিজেই মেরে বলল,
-কি ভাবছি আমি? ও তো আমার কমসে কম ৭ বছরের ছোট। পিচ্চি একটা মেয়ে। ধ্যাৎ!
অঙ্কনকে দেখে কুহু চমকে গেলো। অঙ্কনের সামনে গিয়ে কুহু বলল,
-এক্সকিউজমি! আপনি ওই ভাইয়াটা না যে আমার পায়ে ব্যথা দিয়েছিলেন?
-হুম স্যরি! এখনো ব্যথা আছে তোমার পায়ে?
-হ্যা আপনার জন্যই আমি হিল পরতে পারিনি। কি অসময়ে আমার পায়ের বারোটা বাজিয়েছেন ভাবুন।
-হিল পরলে হয়ত পায়ের বারোটা দ্বিগুণ বেজে যেত। তোমার নামটা কিন্তু জানিনা।
-কুহু, আসফিয়া চৌধুরী কুহু। আপনার নাম কি?
-অঙ্কন।
-শিহাব ভাইয়ার আইডল বড় ভাই অঙ্কন? (অবাক হয়ে কুহু)
-আইডল কি না জানিনা বাট আমি শিহাবের বড় ভাই অঙ্কন।
-মাই গুডনেস! আপনার নাম এতবার শুনেছি শিহাব ভাইয়ার মুখে আর আন্টির মুখে যা বলার মতো না। আপনিই যে সেই ভাইয়া ভাবতে পারিনি। আপনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট এ পড়েন। আরো কত কিছু জানি আপনার সম্পর্কে! (হাসতে হাসতে কুহু)
- মেয়ে আস্তে! এমনিতেই আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আবার হাসছো তুমি? (মনে মনে অঙ্কন)
-ভাইয়া কিছু বলছেন না কেন? (কুহু)
-তুমি এতকিছু কিভাবে জানো? কখনো তো দেখোনি?
-শিহাব ভাইয়া আর আন্টির মুখ থেকে শুনতে শুনতে কানটা পচে গেছে। আপনাকে ভেবেছিলাম অনেক মুডি হবেন বাট না ইউ আর সো স্মার্ট & সবার সাথে মিশতে পারেন।
-তুমিও অনেক ফ্রিলি কথা বলো। তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলে আমাকে ধরে পেটাতো কালকের ঘটনার জন্য।
-হাহাহাহা! আচ্ছা বাই। কথা বলে ভালো লাগলো৷।
-জ্বি আমারো। কোন কলেজে পড়?
-সামসুল হক! বাই দ্য ওয়ে আপনি কিভাবে জানেন আমি কলেজে পড়ি?
-শিহাব বলেছিলো কালকে। এখান থেকে এভ্রিডে এসে যেয়ে ক্লাস কর?
-হ্যা বাট অভ্যাস হয়ে গেছে।
-ভালো ব্যাপার। আচ্ছা যাও তুমি।
কুহু চলে যাওয়ার পর অঙ্কন জোরে নিঃশ্বাস নিলো। হার্টবিট বন্ধ ই হয়ে যেত আর একটু হলে! অঙ্কন সারাক্ষণ তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে নিজের অনিচ্ছাতে কুহুকেই দেখলো। হলুদের পর্ব শেষ করে অঙ্কন বাসায় এসে এশারের নামাজ পরে বই হাতে নিলো। আবারো সেই ঘুরেফিরে কুহুর কথাই মনে পরছে। কি মিষ্টি ভয়েস ওর! কি চঞ্চল! অঙ্কন আবার নিজে নিজেই বলে
-কি আশ্চর্য! ও তো আমার ছোট! শুধু ছোট না অনেক ছোট। কি ভাবছি এসব? লজ্জা হওয়া উচিৎ অঙ্কন তোর।
চলবে................
0 মন্তব্যসমূহ